কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা চতুর্থ অধ্যায়: আরকানুল ঈমান ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৪. ৪. ১০. বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার সমতা বনাম মর্যাদার পার্থক্য

বিশ্বাস ও ভক্তির দিক থেকে সকল নবীর অধিকার সমান। আমাদের দায়িত্ব তাদের সকলের প্রতি  ঈমান আনা এবং সবাইকে সম্মান ও মর্যাদা দান করা, কারো প্রতি সামান্যতম অমর্যাদা মূলক কোনো কথা, কর্ম বা বিশ্বাস থেকে দূরে থাকা। কুরআন কারীমে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুমিনগণ নবীগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন না। মহান আল্লাহ বলেন:

آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ

‘‘রাসূল তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে এবং মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহে, তাঁর মালাকগণে, তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসূলগণে ঈমান এনেছে। (তারা বলে): ‘আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না।’[1]

অন্যত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা বলেন:

إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلا أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا وَالَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَمْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ أُولَئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيهِمْ أُجُورَهُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا

‘‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণে অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহে ঈমান এবং তাঁর রাসূলগণে ঈমানের মধ্যে তারতম্য করতে চায়, এবং বলে: ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি এবং কতককে প্রত্যাখ্যান করি’ এবং এর মধ্যবর্তী কোনো পথ অবলম্বন করতে চায়, তারাই প্রকৃত কাফির, এবং কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্ত্তত রেখেছি। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণে ঈমান আনে এবং তাদের একের সাথে অপরের পার্থক্য করে না তাদেরকে তিনি পুরস্কার দিবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালূ।’’[2]

এভাবে বিশ্বাস, ভক্তি ও ভালবাসার ক্ষেত্রে সাম্যের পাশাপাশি নবী-রাসূলগণের মধ্যে কারো মর্যাদা কারো চেয়ে বেশি বলে আল্লাহ জানিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:

تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ

‘‘এই রাসূলগণ, তাদের মধ্যে কতককে আমি কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছে যার সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন, আবার কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।’’[3]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন:

وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَى بَعْضٍ وَآَتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا

‘‘আমি তো নবীগণের কতককে কতকের উপর মর্যাদা দিয়েছি এবং দাঊদকে আমি যাবূর দিয়েছি।’’[4]

এভাবে আমরা সকল নবীকে সমান সম্মানের সাথে বিশ্বাস করি। আরো বিশ্বাস করি যে, তাঁদের মধ্যে কারো মর্যাদা আল্লাহর কাছে অন্যদের চেয়ে বেশি। আর সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)।

[1] সূরা (২) বাকারা: ২৮৫ আয়াত। আরো দেখুন: সূরা (২) বাকারা ১৩৬ আয়াত ও সূরা (৩) আল-ইমরান ৮৪ আয়াত।
[2] সূরা (৪) নিসা: ১৫০-১৫২ আয়াত।
[3] সূরা (২) বাকারা: ২৫৩ আয়াত।
[4] সূরা (১৭) ইসরা (বানী ইসরাঈল): ৫৫ আয়াত।